ফখরুল আলম, বয়স ৭৯ বছর। সাত সন্তানের জনক এই বৃদ্ধর কাঁধে এখনও সংসারের ভার।
স্বামী-স্ত্রী দুইজনেই হার্টের রোগী। মাঝে মধ্যেই চিকিৎসকের দারস্থ হতে হয়। ওষুধ কিনতে গিয়ে এমনিতেই তারা হিমশিম খান। এরপর আবার ছোট তিন ছেলে-মেয়ের লেখাপড়ার খরচ।





এমন পরিস্থিতিতে জীবিকার জন্য এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে ছুটছেন বৃদ্ধ ফখরুল। বাইসাইকেল চালিয়ে প্রাইভেট পড়াচ্ছেন দিন প্রতি ২০ টাকায়। ফখরুলের বাড়ি মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার বড়রিয়া গ্রামে। তিনি মৃত আবুল হাশেমের ছেলে।





জানা যায়, কোম্পানির গিভ অ্যান্ড টেক (দেওয়া-নেওয়া) নীতির কারণে কোম্পানির চাকরি ছাড়েন তিনি। মিশে যান ছোট ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে।





বৃদ্ধা ফখরুল বলেন, কোম্পানির লোকজন ‘গিভ অ্যান্ড টেক’ ছাড়া কিছুই বোঝে না। তারা আমাদের কষ্ট বোঝে না। বাচ্চাদের মধ্যে এতো পাপ স্পর্শ করেনি। তাদের মধ্যে ‘গিভ অ্যান্ড টেক’ নেই। তাই বাচ্চাদের পড়াই। তাদের কষ্ট বোঝার চেষ্টা করি। যারা টাকা দিতে পারেনা তাদের ফ্রি পড়াই। আবার অনেকের কাছ থেকে ২০ টাকার কমও নিই।





তিনি আরো বলেন, এখন আমার বয়স হয়েছে। তিন ছেলে ও এক মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। তারা যার যার সংসার করছে। মেঝো ছেলে কিছু টাকা দেয় তা দিয়ে আমার ওষুধও হতে চায় না। বাধ্য হয়ে জীবিকার জন্য এখনও পড়াইতে হয়।





শিল্পী খাতুন নামে এক অভিভাবক বলেন, আমার ছেলে মেয়েকে তার কাছে পড়াই। তিনি ভালো পড়ান। আগে ছেলে মেয়েরা রিডিং পড়তে পারতো না। এখন রিডিং পড়তে পারে। অংকও শিখেছে।
ফল বিক্রেতা শাজাহান বলেন, আমি বাজার থেকে ২০ টাকার প্রাইভেট দেখে আমার মেয়েকে পড়াতে বলেছিলাম। যেদিন পড়াবো সেদিন ২০ টাকা দিতে হবে। যেদিন পড়াবো না সেদিন আর দেওয়া লাগবে না।
বালিদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পান্নু মিয়া বলেন, ফখরুল স্যার আমাদের খুবই শ্রদ্ধার একজন মানুষ। তিনি অনেক ছাত্র-ছাত্রীকে পড়ালেখা শিখিয়েছেন। কোনো প্রয়োজনে তিনি যদি বলেন আমরা দেখব।